আমি সৈনিক

Any Subtitlejunio 29, 2023

[ad_1]

আমি সৈনিক

এখন দেশে সেই সেবকের দরকার যে-সেবক সৈনিক হতে পারবে।

সেবার ভার নেবে নারী কিংবা সেই পুরুষ, যে-পুরুষের মধ্যে নারীর-করুণা প্রবল। নারীর ভালোবাসা আর পুরুষের ভালোবাসা বিভিন্ন রকমের। নারীর ভালোবাসায় মমতা আর চোখের জলের করুণাই বেশি। পুরুষের ভালোবাসায় আঘাত আর বিদ্রোহই প্রধান।

দেশকে যে নারীর করুণা নিয়ে সেবা করে, সে পুরুষ নয়, হয়তো মহাপুরুষ। কিন্তু দেশ এখন চায়, মহাপুরুষ নয়। দেশ চায়, সেই পুরুষ যার ভালোবাসায় আঘাত আছে, বিদ্রোহ আছে। যে দেশকে ভালোবেসে শুধু চোখের জলই ফেলবে না, সে দরকার হলে আঘাতও করবে, প্রতিঘাতও বুক পেতে নেবে, বিদ্রোহ করবে। বিদ্রোহ করা, আঘাত করার পশুত্ব বা পৈশাচিকতাকে যে অনুভূতি নিষ্ঠুরতা বলে দোষ দেয় বা সহ্য করতে পারে না, সেই অনুভূতিই হচ্ছে নারীর অনুভূতি, মানুষের ওইটুকুই হচ্ছে দেবত্ব। যারা পুরুষ হবে, যারা দেশ-সৈনিক হবে, তাদের বাইরে ওই পশুত্বের বা অসুরত্বের বদনামটুকু সহ্য করে নিতে হবে। যে-ছেলের মনে সেবা করবার, বুকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার ইচ্ছাটা জন্মগত প্রবল, তার সৈনিক না হওয়াই উচিত। দেশের দুঃখ-আর্ত পীড়িতদের সেবার ভার এইসব ছেলেরা খুব ভালো করেই করতে পারবে। যেমন উত্তরবঙ্গের বন্যা-পীড়িতদের সেবা সাহায্য। বাংলার ত্যাগী ঋষি প্রফুল্লচন্দ্র আজ মায়ের মমতা নিয়ে দু-হাতে অন্নবস্ত্র বিলোচ্ছেন, এ রূপ জগদ্ধাত্রীর, এ রূপ অন্নপূর্ণার, এ রূপ, এ মূর্তি তো রুদ্রের নয়, প্রলয়ের দেবতার চোখে এমন মায়ের করুণা ক্ষরে না। এই যে হাজার হাজার ছেলেরা এই আর্তদের সেবার জন্য দু-বাহু বাড়িয়ে ছুটেছে, এ-ছোটা যে মায়ের ছোটা, এ-করুণা, এ-সেবা-প্রবণতা নারীর, দেবতার। আমরা এঁদের পূজা করি, এঁদের দেবত্বের কাছে মাথা অবনত করি, কিন্তু এতে তো দেশের বাইরের মুক্তি স্বাধীনতা আনবে না। রবীন্দ্রনাথ, অরবিন্দ, প্রফুল্ল বাংলার দেবতা, তাঁদের পূজার জন্য বাংলার চোখে জল চির-নিবেদিত থাকবে। কিন্তু সেনাপতি কই? সৈনিক কোথায়? কোথায় আঘাতের দেবতা, প্রলয়ের মহারুদ্র? সে-পুরুষ এসেছিল বিবেকানন্দ, সে-সেনাপতির পৌরুষ-হুংকার গর্জে উঠেছিল বিবেকানন্দের কণ্ঠে।

ওরে আমার ভারতের সেরা, আগুন খেলার সোনার বাংলা! কোথায় কোন্ অগ্নিগিরির তলে তোর বুকের অগ্নি-সিন্ধু নিস্তব্ধ নিস্পন্দ হয়ে পড়ল? কোন্ অলস-করা করুণার দেবতার বাঁশির সুরে সুরে তোর উত্তাল অগ্নি-তরঙ্গ-মালা স্তব্ধ-নিথর হয়ে পড়ল? কোথায় ভীমের জন্মদাতা পবন? ফুঁ দাও, ফুঁ দাও এই নিবন্ত অগ্নিসিন্ধুতে, আবার এর তরঙ্গে তরঙ্গে নিযুত নাগ-নাগিনীর নাগ-হিন্দোলা উলসিয়া উঠুক। ওগো করুণার দেবতা, প্রেমের বিধাতা, বাঁশির রাজা! তোমরা মুক্ত বিশ্বের, তোমরা এ ঘুমন্ত দাস-অলস ভারতের নও। এই অলস জাতিকে তোমাদের সুরের অশ্রুতে আরও অলস-উতল করে তুলো না। তোমাদের সুরের কান্নায় কান্নায় এদের অলস আর্ত আত্মা আরও কাতর, আরও ঘুম-আর্দ্র হয়ে উঠল যে। এ সুর তোমাদের থামাও। আঘাত হানো, হিংসা আনো, যুদ্ধ আনো, এদেরে এবার জাগাও, কান্নাকাতর আত্মাকে আর কাঁদিয়ো না।

আমরা যে আশা করে আছি, কখন সে মহা-সেনাপতি আসবে যার ইঙ্গিতে আমাদের মতো শত কোটি সৈনিক বহ্নি-মুখ পতঙ্গের মতো তার ছত্রতলে গিয়ে ‘হাজির হাজির’ বলে হাজির হবে। হে আমার অজানা প্রলয়ংকর মহা-সেনানী, তোমায় আমি দেখি নাই, কিন্তু তোমার আদেশ আমি শুনেছি, আমি শুনেছি। আমায় যুদ্ধ-ঘোষণার যে তূর্য-বাদনের ভার দিয়েছ, সে ভার আমি মাথা পেতে নিয়েছি। এ যে তোমার হুকুম। সাধ্য কি, আমি তার অমান্য করি? হে আমার অনাগত অব্যক্ত মহাশক্তি! বাজাও, বাজাও, এমনি করে আমার কণ্ঠে তোমার প্রলয় শিঙা বাজাও! তোমার রণভেরি আমারই ক্ষীণ কণ্ঠে আর্তনাদ করে উঠুক। ঘরের পরের সকল মার, সকল আঘাত যেন নির্বিকার চিত্তে, হাসিমুখে সহ্য করে আমি তোমারই দেওয়া তূর্যে যুদ্ধ-ঘোষণা করতে পারি। হে আমার অপ্রকাশ মহাবিদ্রোহী, তুমিই আমায় বল দিয়ো। যেদিন তুমি আসবে সেদিন যেন তোমারই পতাকা-তলে তোমার দেওয়া তরবারি-করে, রক্ত-সৈনিক-বেশে দাঁড়াতে পারি। সেদিন কলিজার শোণিত-মাখা তরবারি তোমার পদতলে অর্ঘ্য দিয়ে তোমার রক্ত-আঁখির প্রসাদ-চাওয়ায় বঞ্চিত না হই। যখন দুশমনের বর্শাফলক আমার বুকে বিদ্ধ হয়ে আমায় সৈনিকের গৌরব-দীপ্ত মরণের অধিকারী করবে, যখন আমার রক্তহীন দেহ ধুলায় লুটিয়ে পড়বে সেদিন-তুমি বোলো প্রভু, ‘বৎস! তুমি তোমার কর্তব্য করেছ।’ মনে করি হয়তো এ তূর্য-বাদনের শক্তি আমার নাই, কিন্তু ছাড়তে তো পারি না, তোমার অব্যক্ত শক্তি, আমায় ছাড়তেও দেয় না, পিছুতেও দেয় না। সে ক্রমেই অগ্রে আরও অগ্রে ঠেলে নিয়ে যায়। আমার অসম্পূর্ণতা, আমার অপ্রকাশ, যা তোমার চোখে ক্ষমার, তা যে অন্যের চক্ষে অপরাধের, প্রভু। আমার বিদ্রোহের মাঝে যেটুকু অহংকার, শুধু সেইটুকু আমার হোক, তুমি শুধু বলো – আমার কণ্ঠে এসো বলো – ‘এ বিদ্রোহ আমার।’

ওই অহংকারের দুর্নামটুকু আমি মাথা পেতে নিতে পারি, সেই শক্তি আমায় দাও। আমার মাঝে বিদ্রোহী বেশে যখন এলে, হে আমার অনাগত মহাবিদ্রোহী বিপুল শক্তি, তখন তো বুঝিনি যে, আমায় শুধু বাইরের আঘাত, ঘরের মারটুকুর অধিকারী করে নিলে, তখন তো বুঝিনি যে, এই বিদ্রোহের প্রসাদ, এ কল্যাণ-ক্ষীরটুকু তোমার। আজ শুধু ডাকছি, আর ডাকছি, আমায় এবার তোমার যুদ্ধ-পতাকা-তলে ডেকে নাও, মরণের মাঝে ডেকে নাও। আমায় দেওয়া তোমার তূর্য-কেতন অন্য সৈনিককে দাও।

সেবার মাঝে আমায় সাড়া দিবার অধিকারী করলে না। বললে, –

‘আর্তের অশ্রুমোচন আমার নয়, আমার রণ-তূর্য। আমি প্রলয়ের, আমি প্রেমের নই। আমি রুদ্রের, আমি করুণার নই। আমি সেবার নই, আমি যুদ্ধের। আমি সেবক নই, আমি সৈনিক। আমি পূজার নই, আমি ঘৃণার। আমি অবহেলার, আমি অপমানের। আমি দেবতা নই, আমি হিংস্র, বন্য, পশু। আমি সুন্দর নই, আমি বীভৎস। আমি বুকে নিতে পারি না, আমি আঘাত করি। আমি মঙ্গলের নয়, আমি মৃত্যুর। আমি হাসির নয়, আমি অভিশাপের।’ হে আমার মাঝের তিক্ত শক্তি, রুদ্রজ্বালা, বিষ-দাহন! হে আমার যুগে যুগে নির্মম নিষ্ঠুর সৈনিক-আত্মা, তোমায় আমি যেন প্রশংসার লোভে খাটো না করি। তোমাকে দেবতা বলে প্রকাশ করবার ভণ্ডামি যেন কোনোদিন আমার মাঝে না আসে। আমি নিজে যতটুকু, ঠিক ততটুকুই যেন প্রকাশ করি। যুগে যুগে পশু-আমার, সৈনিক-আমার জয় হউক!!

Deja un comentario

Nombre *
Añadir un nombre para mostrar
Correo electrónico *
Tu correo electrónico no será publicado

Este sitio usa Akismet para reducir el spam. Aprende cómo se procesan los datos de tus comentarios.

es_ESEspañol