আনওয়ার হোসেন-কে

Any Subtitlejuin 29, 2023

[ad_1]

আনওয়ার হোসেন-কে

১মার্চ, ১৯২৬
ভাই!

… আমার স্বাস্থ্য ছিল অটুট, – জীবনে ডাক্তার দেখাইনি। এই আমার প্রথম অসুখ ভাই, বড্ড ভোগাচ্ছে। প্রায় সাত মাস ধরে ভুগেছি জ্বরে। বড্ড জীবনী-শক্তি কমে গেছে। বাইরে থেকে খুব দুর্বল হইনি। এতদিন সুস্থ হয়তো হয়ে উঠতাম, কিন্তু অবসর বা বিশ্রাম পাচ্ছিনে জীবনে কিছুতেই। এই শরীর নিয়েই আবার বেরুব ৬ মার্চ দিনাজপুরে। সেখানে ডিস্ট্রিক্ট কনফারেন্স, সেখান থেকে মাদারিপুর Fishermen’s conference attend করতে যাব১। ওখান থেকে খুব সম্ভব ঢাকা যাব। যদি যাই দেখা হবে। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যভঙ্গের জন্য। এত দুর্বল আমি এখনও যে, ধৈর্য ধরে একটা চিঠি পর্যন্ত লিখতে পারিনি। আমাদের বাঙালি মুসলমানের সমাজ, নামাজ পড়ার সমাজ। যত রকম পাপ আছে করে যাও – তার জবাবদিহি করতে হয় না এ সমাজে, –কিন্তু নামাজ না পড়লে তার কৈফিয়ত তলব হয়। অথচ কোরানে ৯৯৯ জায়গায় জেহাদের কথা এবং ৩৩ জায়গায় সালাতের বা নামাজের কথা বলা হয়েছে।

আমার লেখার পূর্ব তেজ ইত্যাদির কথা, – আপনি কী আমার বর্তমান লেখাগুলো পড়েছেন? আমি জানি না – লেখা প্রাণহীন হচ্ছে কিনা। হলেও আমি দুঃখিত নই। আমি যার হাতের বাঁশি, সে যদি আমায় না বাজায় তাতে আমার অভিযোগ করবার কিছুই নেই। কিন্তু আমি মনে করি – সত্য আমায় তেমন করেই বাজাচ্ছে, তার হাতের বাঁশি করে। আমার লেখার উদ্দামতা হয়তো কমে আসছে–তার কারণ আমার সুরের পরিবর্তন হয়েছে। আপনি কি আমার ‘সাম্যবাদী’ পড়েছেন২? তা হলে বুঝবেন সব কথা। আপনার অভিযোগ আর যার হোক না কেন, সাহিত্যিকের নয় – রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ আমায় অধিকতর উৎসাহ দিচ্ছেন। তাছাড়া আমি আমার মনের কুঞ্জে আমার বংশীবাদকের বিদায়-পদধ্বনি আজও শুনতে পাইনি। তবে তার নবীনতর সুর শুনছি। সেই সুরের আভাস আমার ‘সাম্যবাদী’তে পাবেন। বাংলা সাহিত্যে আমার স্থান সম্বন্ধে আমি কোনোদিন চিন্তা করিনি। এর জন্য লোভ নেই আমার। সময়ই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সমালোচক। যদি উপযুক্ত হই, একটা ছালা-টালা পাব হয়তো।…

–নজরুল ইসলাম

 

হুগলি
২৩ অগ্রহায়ণ (১৩৩২)

আমার প্রীতি ও সালাম নিন!

আপনার চিঠি … পেয়েছি। সময়মতো উত্তর দিতে পারিনি। তার কারণ, আমার অনবসরের আর অন্ত নেই। তজ্জন্য আমি বড়ো লজ্জিত আছি ভাই – ক্ষমা করবেন। আপনি এত ভালো বাংলা লিখতে পারেন ; আপনার আইডিয়া, ভাব, ভাষা এত স্বচ্ছ ও সুন্দর যে, আপনার সাথে কাগজে অনেক আগেই পরিচয় হওয়া উচিত ছিল। অথচ আপনি আপনাকে গোপন রেখেছেন – আর যত বাজে পুথি-পড়া লেখকরাই আজ মুসলমান সমাজের শ্রেষ্ঠ লেখক!… আপনার চিঠি পড়ে এত আনন্দ লাভ করেছি যে, অনেককে পড়ে শুনিয়েছি। মুসলমান সমাজ আমাকে আঘাতের পর আঘাত দিয়েছে নির্মমভাবে। তবু আমি দুঃখ করিনি বা নিরাশ হইনি। তার কারণ, বাংলাও অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানরা ঈর্ষাপরায়ণ। আমি একটুও বানিয়ে বলছিনে। মুসলমান সমাজ কেবলই ভুল করেছে – আমার কবিতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিত্বকে অর্থাৎ নজরুল ইসলাম জড়িয়ে। আমি মুসলমান – কিন্তু আমার কবিতা সকল দেশের, সকল কালের এবং সকল জাতির। কবিকে হিন্দু-কবি, মুসলমান-কবি ইত্যাদি বলে বিচার করতে গিয়েই এত ভুলের সৃষ্টি!

আমি আপাতত শুধু এইটুকুই বলে রাখি যে, আমি শরিয়তের বাণী১ বলিনি – আমি কবিতা লিখেছি। ধর্মের বা শাস্ত্রের মাপকাঠি দিয়ে কবিতাকে মাপতে গেলে ভীষণ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ধর্মের কড়াকড়ির মধ্যে কবি বা কবিতা বাঁচেও না জন্মও লাভ করতে পারে না। তার প্রমাণ – আরব দেশ। ইসলাম ধর্মের কড়াকড়ির পর থেকে আর সেথা কবি জন্মাল না। এটা সত্য।…

নজরুল ইসলাম

 

laissez un commentaire

prénom *
Ajouter un nom d'affichage
Email *
Votre adresse email ne sera pas publiée

Ce site utilise Akismet pour réduire les indésirables. En savoir plus sur comment les données de vos commentaires sont utilisées.

fr_FRFrançais