আমাদের শক্তি স্থায়ী হয় না কেন?

Any SubtitleJuni 29, 2023

[ad_1]

আমাদের শক্তি স্থায়ী হয় না কেন?

এ প্রশ্নের সর্বপ্রথম উত্তর, আমরা চাকুরিজীবী। মানুষ প্রথম জন্মে তাহার প্রকৃতিদত্ত চঞ্চলতা, স্বাধীনতা ও পবিত্র সরলতা লইয়া। সে চঞ্চলতা চিরমুক্ত, সে স্বাধীনতা অবাধগতি, সে সরলতা উন্মুক্ত উদার। মানুষ ক্রমে যতই পরিবারের গণ্ডি, সমাজের সংকীর্ণতা , জাতির – দেশের ভ্রান্ত গোঁড়ামি প্রভৃতির মধ্য দিয়া বাড়িতে থাকে, ততই তাহার জন্মগত মুক্ত প্রবাহের ধারা সে হারাইতে থাকে, ততই তাহার স্বচ্ছপ্রাণ এই সব বেড়ির বাঁধনে পড়িয়া পঙ্কিল হইয়া উঠিতে থাকে। এসব অত্যাচার সহিয়াও অন্তরের দীপ্ত স্বাধীনতা ফুটিয়া উঠিতে পারে, কিন্তু পরাধীনতার মতো জীবন হননকারী তীব্র হলাহল আর নাই। অধীনতা মানুষের জীবনীশক্তিকে কাঁচাবাঁশে ঘুণ ধরার মতো ভুয়া করিয়া দেয়। ইহার আবার বিশেষ বিশেষত্ব আছে, ইহা আমাদিগকে একদমে হত্যা করিয়া ফেলে না, তিল তিল করিয়া আমাদের জীবনী-শক্তি, রক্ত-মাংস-মজ্জা, মনুষ্যত্ব, বিবেক সমস্ত কিছু জোঁকের মতো শোষণ করিতে থাকে॥ আখের কল আখকে নিঙরাইয়া পিষিয়া যেমন শুধু তাহা শুষ্ক ছ্যাবা বাহির করিয়া দিতে থাকে, এ অধীনতা মানুষকে – তেমনই করিয়া পিষিয়া তাহার সমস্ত মনুষ্যত্ব নিঙড়াইয়া লইয়া তাহাকে ওই আখের ছ্যাবা হইতেও ভুয়া করিয়া ফেলে। তখন তাহাকে হাজার চেষ্টা করিয়াও ভালোমন্দ বুঝাইতে পারা যায় না। আমাদেরও হইয়াছে তাহাই। আমাদিগকে কোনো স্বাধীনচিত্ত লোক এই কথা বুঝাইয়া বলিতে আসিলেই তাই আমরা সাফ বলিয়া দিই, ‘এ লোকটার মাথা গরম!’

সারা বিশ্বে বাঙালির এই যে সকল দিকেই সুনাম, কিন্তু তবুও আমরা কেন এমন দিনদিন মনুষ্যত্ব বর্জিত হইয়া পড়িতেছি? কেন ভণ্ডামি, অসত্য, ভীরুতা, আমাদের পেশা হইয়া পড়িয়াছে? কেন আমরা কাপুরুষের মতো এমন দাঁড়াইয়া মার খাই? ইহার মূলে ওই এক কথা, আমরা অধীন – আমরা চাকুরিজীবী। দেখাইতে পার কী, কোন্ জাতি চাকুরি করিয়া বড়ো হইয়াছে? আমরা দশ-পনেরো টাকার বিনিময়ে মনুষ্যত্ব, স্বাধীনতা অনায়াসে প্রভুর পায়ে বিকাইয়া দিব, তবু ব্যবসা-বাণিজ্যে হাত দিব না, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াইতে চেষ্টা করিব না। এই জঘন্য দাসত্বই আমাদিগকে এমন ছোটো হীন করিয়া তুলিতেছে। যে দশ টাকা পায়, সে যদি পাড়াগেঁয়ে গিয়া অন্তত মুদি, ফেরিওয়ালার ব্যবসা করে, তাহা হইলেও সে বিশ-পঁচিশ টাকা অনায়াসে উপার্জন করিতে পারে। ইচ্ছা থাকিলেই উপায় হয়, আদতে আমরা ইচ্ছাই করিব না, চেষ্টাই করিব না, হইবে কোথা হইতে? যে জাতির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প যত বেশি, সে জাতির মধ্যে স্বাধীন-চিত্ত লোকের সংখ্যা তত বেশি। আর কাজেও যে-জাতির জনসংঘের অধিকাংশেরই চিত্ত স্বাধীন, সে জাতি বড়ো না হইয়া পারে না। ব্যষ্টি লইয়াই সমষ্টি।

আমরা আজ অনেকটা জাগ্রত হইয়াছি, আমরা মনুষ্যত্বকে এক আধটুকু বুঝিতে পারিতেছি, কিন্তু আমাদের এ মনুষ্যত্ববোধ, এ শক্তি স্থায়ী হইতেছে না, শুধু ওই চাকুরি-প্রিয়তার জন্য। সোডা-ওয়াটারের মতো আমাদের শক্তি, আমাদের সাধনা, আমাদের অনুপ্রাণতা এক নিমেষে উঠিয়াই থামিয়া যায়, শোলার আগুনের মতো জ্বলিয়াই নিবিয়া ছাই হইয়া যায়। আমরা যদি বিশ্বে মানুষ বলিয়া মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতে চাই, তবে আমাদের এ শক্তিকে, এ সাধনাকে স্থায়ী করতে হইবে, নতুবা ‘যে তিমিরে সে তিমিরে!’ এবং তাহা করিতে হইলে সর্বপ্রথমে আমাদিগকে চাকুরি ছাড়িয়া পর পদলেহন ত্যাগ করিয়া স্বাধীনচিত্ত উন্নতশীর্ষ হইয়া দাঁড়াইতে হইবে। দেখিয়াছ কি চাকুরিজীবীকে কখনও স্বাধীনচিত্ত সাহসী ব্যক্তির মতো মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতে? তাহার অন্তরের শক্তিকে যেন নির্মমভাবে কচলাইয়া দিয়াছে ওই চাকুরি, অধীনতা, দাসত্ব। আসল কথা, যতক্ষণ না আমরা বাহিরে স্বাধীন হইব, ততক্ষণ অন্তরের স্বাধীনশক্তি আসিতেই পারে না।

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

Situs ini menggunakan Akismet untuk mengurangi spam. Pelajari bagaimana data komentar Anda diproses.

id_IDBahasa Indonesia