অভয়-সুন্দর

Any Subtitleيوليو 1, 2023

[ad_1]

অভয়-সুন্দর

কুৎসিত যাহা, অসাম্য যাহা সুন্দর ধরণিতে –
হে পরম সুন্দরের পূজারি! হবে তাহা বিনাশিতে।
তব প্রোজ্জ্বল প্রাণের বহ্নিশিখায় দহিতে তারে
যৌবন ঐশ্বর্য-শক্তি লয়ে আসে বারে বারে।
যৌবনের এ ধর্ম বন্ধু, সংহার করি জরা
অজর অমর করিয়া রাখে এ প্রাচীনা বসুন্ধরা।
যৌবনের সে ধর্ম হারায়ে বিধর্মী তরুণেরা –
হেরিতেছি আজ ভারতে – রয়েছে জরার শকুনে ঘেরা।

যুগে যুগে জরাগ্রস্ত যযাতি তারই পুত্রের কাছে
আপন বিলাস ভোগের লাগিয়া যৌবন তার যাচে।
যৌবনে করি বাহন তাহার জরা চলে রাজপথে
হাসিছে বৃদ্ধ যুবক সাজিয়া যৌব-শক্তি-রথে।
জ্ঞান-বৃদ্ধের দন্তবিহীন বৈদান্তিক হাসি
দেখিছ তোমরা পরমানন্দে – আমি আঁখিজলে ভাসি
মহাশক্তির প্রসাদ পাইয়া চিনিলে না হায় তারে
শিবের স্কন্ধে শব চড়াইয়া ফিরিতেছ দ্বারে দ্বারে।

এই কি তরুণ? অরুণে ঢাকিবে বৃদ্ধের ছেঁড়া কাঁথা
এই তরুণের বুকে কি পরম-শক্তি-আসন পাতা?
ধূর্ত বুদ্ধিজীবীর কাছে কি শক্তি মানিবে হার?
ক্ষুদ্র রুধিবে ভোলানাথ শিব মহারুদ্রের দ্বার?
ঐরাবতেরে চালায় মাহুত শুধু বুদ্ধির ছলে –
হে তরুণ, তুমি জান কি হস্তী-মূর্খ কাহারে বলে?
অপরিমাণ শক্তি লইয়া ভাবিছ শক্তিহীন –
জরারে সেবিয়া লভিতেছ জরা, হইতেছ আয়ুক্ষীণ।

পেয়ে ভগবদ্-শক্তি যাহারা চিনিতে পারে না তারে
তাহাদের গতি চিরদিন ওই তমসার কারাগারে।
কোন লোভে, কোন মোহে তোমাদের এই নিম্নগ গতি?
চাকুরির মায়া হরিল কি তব এই ভগবদ্-জ্যোতি?
সংসারে আজও প্রবেশ করনি, তবু সংসার – মায়া
গ্রাস করিয়াছে তোমার শক্তি তোমার বিপুল কায়া।
শক্তি ভিক্ষা করিবে যাহারা ভোট-ভিক্ষুক তারা!
চেন কি – সূর্য-জ্যোতিরে লইয়া উনুন করেছে যারা?

চাকুরি করিয়া পিতামাতাদের সুখী করিতে কি চাহ?
তাই হইয়াছে নুড়ো-মুখ যত বুড়োর তলপিবাহ?
চাকর হইয়া বংশের তুমি করিবে মুখোজ্জ্বল?
অন্তরে পেয়ে অমৃত, অন্ধ, মাগিতেছ হলাহল!
হউক সে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট কি মন্ত্রী কমিশনার –
স্বর্ণের গলাবন্ধ পরুক – সারমেয় নাম তার!
দাস হইবার সাধনা যাহার নহে সে তরুণ নহে –
যৌবন শুধু খোলস তাহার – ভিতরে জরারে বহে।

নাকের বদলে নরুন-চাওয়া এ তরুণেরে নাহি চাই –
আজাদ-মুক্ত-স্বাধীনচিত্ত যুবাদের গান গাই।
হোক সে পথের ভিখারি, সুবিধা-শিকারি নহে যে যুবা
তারই জয়গাথা গেয়ে যায় চিরদিন মোর দিলরুবা।
তাহারই চরণধূলিরে পরম প্রসাদ বলিয়া মানি
শক্তিসাধক তাহারেই আমি বন্দি যুক্ত-পাণি।
মহা-ভিক্ষু তাহাদেরই লাগি তপস্যা করি আজও
তাহাদেরই লাগি হাঁকি নিশিদিন – ‘বাজো রে শিঙ্গা বাজো!’

সমাধির গিরিগহ্বরে বসি তাহাদেরই পথ চাহি –
তাহাদেরই আভাস পেলে মনে হয় পাইলাম বাদশাহি!
মোর সমাধির পাশে এলে কেউ, ঢেউ ওঠে মোর বুকে –
‘মোর চির-চাওয়া বন্ধু এলে কি’ বলে চাহি তার মুখে।
জ্যোতি আছে হায় গতি নাই হেরি তার মুখ পানে চেয়ে –
কবরে ‘সবর’ করিয়া আমার দিন যায় গান গেয়ে!
কারে চাই আমি কী যে চাই হায় বুঝে না উহারা কেহ।
দেহ দিতে চায় দেশের লাগিয়া, মন টানে তার গেহ।

কোথা গৃহহারা, স্নেহহারা ওরে ছন্নছাড়ার দল –
যাদের কাঁদনে খোদার আরশ কেঁপে ওঠে টলমল।
পিছনে চাওয়ার নাহি যার কেউ, নাই পিতামাতা জ্ঞাতি
তারা তো আসে না জ্বালাইতে মোর আঁধার কবরে বাতি!
আঁধারে থাকিয়া, বন্ধু, দিব্যদৃষ্টি গিয়াছে খুলে
আমি দেখিয়াছি তোমাদের বুকে ভয়ের যে ছায়া দুলে।
তোমরা ভাবিছ – আমি বাহিরিলে তোমরা ছুটিবে পিছে –
আপনাতে নাই বিশ্বাস যার – তাহার ভরসা মিছে!

আমি যদি মরি সমুখ-সমরে – তবু যারা টলিবে না –
যুঝিবে আত্মশক্তির বলে তারাই অমর সেনা।
সেই সেনাদল সৃষ্টি যেদিন হইবে – সেদিন ভোরে
মোমের প্রদীপ নহে গো – অরুণ সূর্য দেখিব গোরে!
প্রতীক্ষারত শান্ত অটল ধৈর্য লইয়া আমি
সেই যে পরম ক্ষণের লাগিয়া জেগে আছি দিবা-যামী।
ভয়কে যাহারা ভুলিয়াছে – সেই অভয় তরুণ দল
আসিবে যেদিন – হাঁকিব সেদিন – ‘সময় হয়েছে, চল!’

আমি গেলে যারা আমার পতাকা ধরিবে বিপুল বলে –
সেই সে অগ্রপথিকের দল এসো এসো পথতলে!
সেদিন মৌন সমাধিমগ্ন ইসরাফিলের বাঁশি
বাজিয়া উঠিবে – টুটিবে দেশের তমসা সর্বনাশী!

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

هذا الموقع يستخدم Akismet للحدّ من التعليقات المزعجة والغير مرغوبة. تعرّف على كيفية معالجة بيانات تعليقك.

arالعربية