তুমি কি গিয়াছ ভুলে

Any Subtitleيوليو 1, 2023

[ad_1]

তুমি কি গিয়াছ ভুলে

তুমি কি গিয়াছ ভুলে? –
তোমার চরণ-স্মরণ-চিহ্ন আজও মোর নদীকূলে
মুছিল না প্রিয়, মুছিল না তার বুকে যে লিখিলে লেখা!
মাঝে বহে স্রোত, দু-কূল জুড়িয়া চরণ-স্মরণ-রেখা।
বন্যার ঢল, জোয়ার, উজান আসে যায় ফিরে ফিরে,
ও চরণ-লেখা মুছিল না মোর বালুচরে নদীতীরে!
ঊর্ধ্বে ধূসর সান্ধ্য আকাশে ক্ষীণ চন্দ্রের লেখা,
নিম্নে আমার শুনো বালুচরে তোমার চরণ-রেখা।

কূলে আসি একা বসি,
তব মুখ-মদ-গন্ধের ফুলবন ওঠে নিশ্বসি।
কূলে একা বসি ঢেউ গণি আর চাহি ওপারের তীরে –
প্রভাতে যে পাখি উড়িল সে সাঁঝে ফিরিল না আর নীড়ে।
এই বালুচর শূন্য ধূসর আমার এ মরুভূমি
কেন এ শূন্যে চরণ-চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেলে তুমি?
হেরিনু, আকাশে ওঠেনিকো চাঁদ – শূন্য আকাশ কাঁদে,
ও বিরাট বুক ভরিয়া তোলে কি ওইটুকু ক্ষীণ চাঁদে?

চলে-যাওয়া দিনগুলি
মনের মানিক-মঞ্জুষা হতে খুলে দেখি, রাখি তুলি।
কতবার আসি ফিরে যাই বেয়ে তোমার দেশের নদী,
কত বধূ আসে জল নিতে সেথা তুমি সেথা আস যদি।
তোমার কলসি-হিল্লোল যদি মোর নায়ে এসে লাগে
দুটি চেনা চোখ সন্ধ্যা-দীপের মতো যদি সেথা জাগে!….
কতদিন সাঁঝে হইয়াছে মনে, তোমারে বা দেখিয়াছে,
তরণিতে কার চেনা বাঁশি শুনে আসিয়াছ কাছাকাছি।
আঁচল ভরিয়া জলে-ভেজা রাঙা হিজলের ফুলগুলি
কুড়াতে তোমার ঘোমটা খসেছে, এলোখোঁপা গেছে খুলি!

সর্পিল বাঁকা বেণি,
ওর সাথে ছিল মোর আঙুলের কতই না চেনাচেনি!
ওই সে বেণির বিনুনিতে মোর বাঁধা পড়েছিল হিয়া,
কতদিন তারে ছাড়াতে চেয়েছে আমার আঙুল দিয়া! –
দাঁড়ায়েছ আসি, সোনাগোধূলিতে আকাশ গিয়াছে ভরে,
পিছনের কালো-বেণিতে সন্ধ্যা বাঁধা পড়ে কেঁদে মরে!
বাঁশিতে কাঁদিয়া ফিরিয়া এসেছি তরণি বাহিয়া দূরে,
আমার নিশাসে নাহি নেভে যেন প্রদীপ তোমার পুরে।….
ছল করে যবে জল নিতে যাও – নদী-তরঙ্গে হায়!
তরঙ্গ কি গো দুলে ওঠে মনে, কলসি ভাসিয়া যায়?
নয়নের নীরে তুমি ডোব, ডোবে কলসি নদীর জলে?
অথবা কাঁখের কলসিই শুধু ডুবাতে শিখেছ ছলে?

যত চাই সব ভুলি,
আঁধার ভরিয়া ডাকে আঙনের তব ঝাউগাছগুলি।
তব অঙ্গুলি-ইঙ্গিত যেন ওদের শীর্ণ শাখা,
হাহাকার করে আকাশে চাহিয়া, বাতাসে ঝাপটে পাখা!
ভুলিবার কথা ভুলে যাই, হায় বন্দিনি মোর পাখি,
পিঞ্জর-পাশে আসি যাই ফিরে, আকাশে থাকিয়া ডাকি!

ফিরে আসি একা নীড়ে,
ক্লান্ত পক্ষ বসে বসে ভাবি ভাঙা মোর তরু-শিরে।
দশ দিক ভরে কলরব করে অচেনারা ছুটে আসে,
তুমি নাই তাই ঘিরিয়া সবাই বসে মোর আশে-পাশে।
না চাহিতে কেহ পাখায় আমার বাঁধে অসহায় পাখা,
তৃষিত অধরে নিয়ে যায় ভরে বেদনার বিষ মাখা।

আজ আমি অপরাধী,
অভিমান-জ্বালা নিবারিত নিতি অপরাধ করি – কাঁদি!
যে আসে এ বুকে তাহারই হৃদয়ে তোমার হৃদয় খুঁজি,
খুঁজিতে খুঁজিতে হারায়ে ফেলেছি মোর হৃদয়ের পুঁজি।
শূন্য আকাশে ওঠেনাকো চাঁদ, উল্কারা আসে ছুটে,
আগুনের তৃষা মিটাই তাদের অগ্নি-অধর-পুটে!

তুমি যাও নাই ভুলে?
মম পথ পানে চাহ কি আজিও সন্ধ্যা-প্রদীপ তুলে?
নিবাও নিবাও ও সন্ধ্যা-দীপ, চাহিয়ো না মোর পথে,
মরণের রথে উঠেছে, উঠিত যে তব সোনার রথে।
কুসুমের মালা দু-দিনে শুকায়, থাক অতীতের স্মৃতি –
শুকাবে না যাহা – আমার গাঁথা এ কাঁটার কথার গীতি!

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

هذا الموقع يستخدم Akismet للحدّ من التعليقات المزعجة والغير مرغوبة. تعرّف على كيفية معالجة بيانات تعليقك.

arالعربية