১৩. সত্যাগ্রহী মোহাম্মদ

Any Subtitleজুন 29, 2023

[ad_1]

সত্যাগ্রহী মোহাম্মদ

আঁধার ধরণি চকিতে দেখিল স্বপ্নে রবি,
মক্কায় পুন ফিরিয়া আসিল কিশোর নবি।
ছাগ মেষ লয়ে চলিল কিশোর আবার মাঠে,
দূর নিরালায় পাহাড়তলির একলা বাটে।
কী মনে পড়িত চলিতে চলিতে বিজন পুরে,
কে যেন তাহারে কেবলই ডাকিছে অনেক দূরে।
আশমানি তার তাম্বু টাঙানো মাথার পরে,
গ্রহ রবি শশী দুলিতেছে আলো স্তরে স্তরে।
ভুলে গিয়ে পথ, ভুলি আপনায়, বিশ্ব ভুলি
বসিত কিশোর আসন করিয়া পথের ধূলি।
থমকি দাঁড়াত গগনে সূর্য, ধেয়ান-রত,
কিশোরে হেরিতে নমিত পাহাড় শ্রদ্ধানত।
সাগরের শিশু মেঘেরা আসিত দানিতে ছায়া,
সহসা বাজিল রণ-দুন্দুভি আরবদেশে,
‘ফেজার’ যুদ্ধ আসিল ভীষণ করাল বেশে।
মরুর মাতাল মাতিল রৌদ্র-শারাব পিয়া,
যে গৃহযুদ্ধে আরব হইল মরু সাহারা,
আত্মবিনাশী সে রণে নামিল পুন তাহারা।
এ মহারণের জন্ম প্রথম ‘ওকাজ’ মেলায়,
মাতিত যেখানে সকল আরব পাপের খেলায়।
সকল প্রধান গোত্র মিলিত হেথায় আসি,
একে অন্যের পাত্রে ছিটাতে কাদার রাশি।
কবির লড়াই চলিত সেখানে কুৎসা গালির,
মদের অধিক ছুটিত বন্যা কাদা ও কালির।
এই গালাগালি লইয়া বাধিল যুদ্ধ প্রথম,
দেখিতে দেখিতে লাগিল ‘ফেজার’ দুপুরে মাতম।
নবির গোত্র ‘বনি হাশেমী’রা সে ভীম রণে
হইল লিপ্ত তাদের মিত্র-গোত্র সনে।
তরুণ নবিও চলিল সে রণে যোদ্ধৃসাজে,
যুদ্ধে যাইতে পরানে দারুণ বেদনা বাজে।
ভায়ে ভায়ে এই হানাহানি হেরি পরান কাঁদে,
নাহি কি গো কেহ – এদের সোনার রাখিতে বাঁধে?
সকল গোষ্ঠী সর্দারে ডাকি বোঝায় কত,
আপনার দেহ করিস তোরা রে আপনি ক্ষত!
মৃত্যু-মদের মাতাল না শোনে নবির বাণী,
পাঁচটি বছর চলিল ভীষণ সে হানাহানি।
সদা নিরন্ন আতুর দুঃখী দরিদ্রেরে
সেবিত যে তারে ফেলিলে গো খোদা এ কোন ফেরে!
যুদ্ধভূমিতে গিয়া নবি হায় যুদ্ধ ভুলি
আহত সেনারে সেবিত আদরে বক্ষে তুলি।
দেখিতে দেখিতে তরুণ নবির সাধনা সেবায়
শত্রু মিত্র সকলে গলিল অজানা মায়ায়।
সন্ধি হইল যুযুৎসু সব গোত্র দলে
মোহাম্মদের মানিল সালিশ মিলি সকলে।
বসিল সালিশ ‘ইবনে জদ্‌আন’ গৃহে মক্কায়,
মধ্যে মধ্যমণি আহমদ শোভা সে সভায়!
‘হাশেম’, ‘জোহরা’ গোত্রের যত সেরা সর্দার
শরিক হইল শুভক্ষণে সে সালিশি সভার।
মোহাম্মদের প্রভাবে সকলে হইল রাজি,
সত্যের নামে চলিবে না আর ফেরেববাজি!
আল্লার নামে শপথ করিল হাজির সবে
সন্ধির সব শর্ত এবার কায়েম রবে।
একটি পশম ভেজাবার মতো সমুদ্র জল
রবে যতদিন, ততদিন রবে শর্ত অটল!
ফেলি হাতিয়ার হাতে হাত রেখে মিলি ভাই ভাই
এই সে শর্তে হল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সবাই।
(১) আমরা আরবে অশান্তি দূর করার লাগি
সকল দুঃখ করিব বরণ বেদনাভাগী।
(২) বিদেশির মান সম্ভ্রম ধন প্রাণ যা কিছু
রক্ষিব, শির তাহাদের কভু হবে না নিচু।
৩) অকুন্ঠ চিত্তে দরিদ্র আর অসহায়েরে
রক্ষিব মোরা পড়িলে তাহারা বিপদ ফেরে।
(৪) করিব দমন অত্যাচারীর অত্যাচারে,
দুর্বল আর হবে না পীড়িত তাদের দ্বারে।
দুর্বল দেশ, দুর্বল আজ স্বদেশবাসী,
আমরা নাশিব এ-উৎপীড়ন সর্বনাশী!
দু-চারি বছর সন্ধির এই শর্ত মতো
আরবের মরু হল না কলহ-ঝটিকাহত।
রক্তের তৃষ্ণা ব্যাঘ্র কদিন ভুলিয়া রবে,
মাতিল আরব বারে বারে তাই ঘোর আহবে।
ভোলেনি আরবে শুধু একজন একথা কভু,
মোহাম্মদ সে সত্যাগ্রহী দীনের প্রভু!
বহুকাল পরে পেয়ে পয়গম্বরী নবুয়ত
এই প্রতিজ্ঞা ভোলেনি সত্যব্রতী হজরত।
ভীষণ ‘বদর’ সংগ্রামে হয়ে যুদ্ধ-জয়ী
বজ্র-ঘোষ কন্ঠে কহেন, ‘মিথ্যাময়ী
নহে নহে মোর প্রতিজ্ঞা-বাণী, শোনরে সবে,
যুদ্ধে-বন্দি শত্রুরা আজ মুক্ত হবে!
শত্রু-পক্ষ কেহ যদি আজ হাসিয়া বলে,
প্রতিজ্ঞা করি ভোলাও এমনই মিথ্যা ছলে!
কেহ নাহি দেয় – আমি দিব সাড়া তাহার ডাকে,
সত্যের তরে এই ‘ইসলাম’ কহিব তাকে!
অসহায় আর উৎপীড়িতের বন্ধু হয়ে
বাঁচাতে এসেছে ‘ইসলাম’ নিজে পীড়ন সয়ে!’
ন্যায়েরে বসাবে সিংহ-আসনে লক্ষ্য তাহার ;
মুসলিম সেই, এই ন্যায়-নীতি ধেয়ান যাহার!
এমনই করিয়া ভবিষ্যতের সহস্রদল
মেলিতে লাগিল পাপড়ি তাহার আলোর কমল।
অনাগত তার আলোক-আভাস গগনে লেগে
উঠিতে লাগিল নতুন দিনের সূর্য জেগে।
আকাশের পর-কোণা রেঙে ওঠে সেই পুলকে,
দ্যুলোকের রবি আলো দিতে আসে এই ভূলোকে।
স্তব করে আর কাঁদে ধরণির সন্তানগণ,
ব্যথা-বিমথন এসো এসো ওগো অনাথ-শরণ!

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা