মোরা সবাই স্বাধীন মোরা সবাই রাজা

Any Subtitlejunio 29, 2023

[ad_1]

মোরা সবাই স্বাধীন 
মোরা সবাই রাজা

একবার শির উঁচু করে বলো দেখি বীর, ‘মোরা সবাই স্বাধীন, সবাই রাজা!’ দেখবে অমনি তোমার পূর্ব-পুরুষের রক্ত-মজ্জা-অস্থি দিয়ে গড়া রক্ত-দেউল তাসের ঘরের মতো টুটে পড়েছে, তোমার চোখের সাত-পুরু-করে বাঁধা পর্দা খুলে গেছে, তিমির রাত্রি দিক-চক্রবালের আড়ালে গিয়ে লুকিয়েছে। তোমার হাতে-পায়ে গর্দানে বাঁধা শিকলে প্রচণ্ড মোচড় দিয়ে বলো দেখি বীর – ‘মোরা সবাই স্বাধীন, সবাই রাজা!’ দেখবে অমনি তোমার সকল শিকল সকল বাঁধন টুটে খান খান হয়ে গেছে।

স্বরাজ মানে কী? স্বরাজ মানে, নিজেই রাজা বা সবাই রাজা ; আমি কারুর অধীন নই, আমরা কারুর সিংহাসন বা পতাকাতলে আসীন নই। এই বাণী যদি বুক ফুলিয়ে কোনো ভয়কে পরোয়া না করে মুক্তকণ্ঠে বলতে পার, তবেই তোমরা স্বরাজ লাভ করবে, স্বাধীন হবে, নিজেকে নিজের রাজা করতে পারবে ; নইলে নয়।

কিন্তু আসল প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘আমার রাজা আমি’ – বাণী বলবার সাহস আছে কোন্ বিদ্রোহীর? তার সোজা উত্তর – যে বীর কারুর অধীন নয়, বাইরে-ভিতরে যে কারুর দাস নয়, সম্পূর্ণ উদার, মুক্ত! যার এমন কোনো গুরু বা বিধাতা নেই যাকে ভয় বা ভক্তি করে সে নিজের সত্যকে ফাঁকি দেয়, শুধু সে-ই সত্য স্বাধীন, মুক্ত স্বাধীন। এই অহম্-জ্ঞান আত্মজ্ঞান – অহংকার নয়, এ হচ্ছে আপনার ওপর অটল বিরাট বিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস না থাকলে, নিজের শক্তির ওপর আস্থা না থাকলে, মানুষ কাপুরুষ হয়ে যায়, ক্লীবত্ব প্রাপ্ত হয়। পরকে ভক্তি করে বিশ্বাস করে শিক্ষা হয় পরাবলম্বন, আর পরাবলম্বন মানেই দাসত্ব। এই মনের পরাবলম্বন বা গোলামিই আমাদের চির-গোলাম করে রেখেছে। আমাদের তেত্রিশ কোটি লোকের তেত্রিশ কোটি দেবতা, অর্থাৎ আমাদের ভারতে তেত্রিশ কোটি মানুষের সকলেরই নির্ভরতা তাদের স্ব-স্ব দেবতার ওপর! সবাই বলেন, দেবতা আছেন – আর তাঁরা নেই। অর্থাৎ কিনা, এটা নাস্তিকের দেশ, স্ব-হীন দেশ। অতএব এ স্ব-হীন দেশ যদি বলে যে, স্বরাজ লাভ করব, তাহলে যে তাদেরে উপহাস করে আর ওই নাস্তিকের বুকে লাথি মারে, অন্যায় করে বলে তো মনে হয় না – উলটো উপকারই করে। যার অন্তরে আপন সত্য আপন ভগবান সহজে জাগে না, তাদের ভগবান এমনি করে বুকে লাথি খেয়ে তবে জাগে। যারা আমাদেরে পায়ের তলায় রেখে আমাদের বুকে পদাঘাত করছে, মুখে থুথু দিচ্ছে, তারা আমার নমস্য। সে-অসুরের পায়ের ধুলো আমি মাথায় নিই, যে-অসুর ভীরু দেবতাকে পদাঘাত করে পৌরুষ শেখায়, তার লুপ্ত দেবত্বকে সিংহ-বিক্রমে জাগিয়ে তোলে। যে জাগ্রত ওসমান সুপ্ত জগৎসিংহকে ভীম-পদাঘাতে যুদ্ধে উদ্‌বুদ্ধ করে, তাকে আমি নমস্কার করি। যে ভৃগু নিদ্রিত ভগবানের বুকে লাথি মেরে জাগায়, সে ভৃগুকে আমি প্রণাম করি। যে নরমুণ্ড-মালিনী চন্ডী নিদ্রিত শিবের বুকে তাণ্ডব নৃত্য করে প্রলয়-করতালি বাজিয়ে তাঁকে জাগিয়ে তোলে. সেই অশিব-নাশিনীর উদ্দেশে আমার কোটি কোটি নমস্কার। শিবকে জাগাও, কল্যাণকে জাগাও। আপনাকে চেনো। বিদ্রোহের মতো বিদ্রোহ যদি করতে পার, প্রলয় যদি আনতে পার, তবে নিদ্রিত শিব জাগবেই, কল্যাণ আসবেই। লাথির মতো যদি লাথি মারতে পার, তা হলে ভগবানও তা বুকে করে রাখে। ভৃগুর মতো বিদ্রোহী হও, ভগবানও তোমার পায়ের ধুলো নেবে। কাউকে মেনো না, কোনো ভয়ে ভীত হয়ো না বিদ্রোহী। ছুটাও অশ্ব, চালাও রথ, হানো অগ্নিবান, বাজাও দামামা-দুন্দুভি! বলো, যে যায় যাক সে, আমি আছি। বলো আমিই নূতন করে জগৎ সৃষ্টি করব। স্রষ্টার আসন থরথর করে কেঁপে উঠুক!‌ বলো, কারুর অধীনতা মানি না, স্বদেশিরও না, বিদেশিরও না। যে অপমান করে তার চেয়ে কাপুরুষ হীন সে-ই, যে অপমান সয়। তোমার আত্মশক্তি যদি উদ্‌বুদ্ধ হয়ে ওঠে তবে বিশ্বে এত বড়ো দানব-শক্তি নেই, যা তোমাকে পায়ের তলায় ফেলে রাখে। নির্যাতন যদি সয়ে থাক, তবে সে দোষ তোমারই। নিজের দুর্বলতার জন্য অন্যের শক্তির নিন্দা কোরো না।

জাগো অচেতন, জাগো! আত্মাকে চেনো! যে মিথ্যুক তোমার পথে এসে দাঁড়ায়, পিষে দিয়ে যাও তাকে, দেখবে তোমারই পতাকা-তলে বিশ্ব শির লোটাচ্ছে। তোমারই আদর্শে জগৎ অধীনতার বাঁধন কেটে মুক্ত উদার আকাশতলে এক পঙ্‌ক্তিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

Deja un comentario

Nombre *
Añadir un nombre para mostrar
Correo electrónico *
Tu correo electrónico no será publicado

Este sitio usa Akismet para reducir el spam. Aprende cómo se procesan los datos de tus comentarios.

es_ESEspañol