০৪. স্বপ্ন

Any Subtitlejunio 29, 2023

[ad_1]

স্বপ্ন

প্রভাত-রবির স্বপ্ন হেরে গো যেমন নিশীথ একা
গর্ভে ধরিয়া নতুন দিনের নতুন অরুণ-লেখা।
তেমনই হেরিছে স্বপ্ন আমিনা – যেদিন নিশীথ শেষে
স্বর্গের রবি উদিবে জননী আমিনার কোলে এসে।
যেন গো তাহার নিরালা আঁধার সূতিকা-আগার হতে
বাহিরিল এক অপরূপ জ্যোতি, সে বিপুল জ্যোতি-স্রোতে
দেখা গেল দূর বোসরা নগরী দূর সিরিয়ার মাঝে।
ইরান-অধীপ নওশেরোয়াঁর প্রাসাদের চূড়া লাজে
গুঁড়া হয়ে গেল ভাঙিয়া পড়িয়া। অগ্নিপূজা দেউল
বিরাণ হইয়া গেল গো ইরান নিভে গিয়ে বিলকুল।
জগতের যত রাজার আসন উলটিয়া গেল পড়ি,
মূর্তিপূজার প্রতিমা ঠাকুর ভেঙে গেল গড়াগড়ি!
নব নব গ্রহ তারকায় যেন গগন ফেলিল ছেয়ে,
স্বর্গ হইতে দেবদূত সব মর্ত্যে আসিল ধেয়ে।
সেবিতে যেন গো আমিনায় তাঁর সূতিকা-আগার ভরি,
দলে দলে এল বেহেশ্‌ত হইতে বেহশ্‌তি হুরপরি।
যত পশু-পাখি মানুষের মতো কহিল গো যেন কথা,
রোম-সম্রাট-কর হতে ক্রস খসিয়া পড়িল হোথা,
হেঁটমুখ হয়ে ঝুলিতে লাগিল পূজার মূর্তি যত,
হেরিলেন জ্যোতি-মণ্ডিত দেহ অপরূপ রূপ কত!
টুটিতে স্বপ্ন হেরিলেন মাতা, ফুটিতে আলোর ফুল
আর দেরি নাই, আগমনি গায় গুলবাগে বুলবুল।
কী এক জ্যোতির্শিখার ঝলকে মাতা ভয়ে বিস্ময়ে
মুদিলেন আঁখি। জাগিলেন যবে পূর্ব-চেতনা লয়ে,
হেরিলেন চাঁদ পড়িয়াছে খসি যেন রে তাঁহার কোলে,
ললাটে শিশুর শত সূর্যের মিহির লহর তোলে!
শিশুর কন্ঠে অজানা ভাষায় কোন অপরূপ বাণী
ধ্বনিয়া উঠিল, সে স্বরে যেন রে কাঁপিল নিখিল প্রাণী।
ব্যথিত জগৎ শুনেছে ব্যথায় যার চরণের ধ্বনি,
এতদিনে আজ বাজাল রে তার বাঁশুরিয়া আগমনি!
নিখিল ব্যথিত অন্তরে এর আসার খবর রটে
ইহারই স্বপন জাগেরে নিখিল-চিত্ত-আকাশপটে।
সারা বিশ্বের উৎপীড়িতের রোদনের ধ্বনি ধরি
ধরণির পথে অভিসার এল ছিল দিবা শর্বরী।
সাগর শুকায়ে হল মরুভূমি এরই তপস্যা লাগি,
মরু-যোগী হল খর্জুরতরু ইহারই আশায় জাগি।
লুকায়ে ছিল যে ফল্গুর ধারা মরু-বালুকার তলে
মরু-উদ্যানে বাহিরিয়া এল আজি ঝরনার ছলে।
খর্জুর-বনে এলাইয়া কেশ সিনানি সিন্ধুজলে
রিক্তাভরণা আরব বিশ্ব-দুলালে ধরিল কোলে!
‘ফারাণের’ পর্বত-চূড়াপানে ভাববাদী বিশ্বের
কর-সংকেতে দিল ইঙ্গিত ইহাই আগমনের।
সেদিন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির সুখে হসিল বিশ্বত্রাতা,
‘সুয়োরানি’ হল আজিকে যেন রে বসুমতী ‘দুয়ো’ মাতা

‘মারহাবা         সৈয়দে মক্কি মদনি আল-আরবি!’
  গাহিতে         নান্দী গো যাঁর নিঃস্ব হল বিশ্বকবি।
  আসিল          বন্ধ-ছেদন শঙ্কা-নাশন শ্রেষ্ঠ মানব,
   পশিল         অন্ধ গুহায় ওই পুনরায় রক্ষ দানব।
  ভাসিল          বন্যাধারায় ‘দজলা’ ‘ফোরাত’ কন্যা মরুর,
 সাহারায়          নৌবতেরই বাজনা বাজে মেঘ-ডমরুর।
  বেদুইন          তাম্বু ছিঁড়ে বর্শা ছুঁড়ে অশ্ব ছেড়ে
  খেলিছে          গেণ্ডুয়া-খেল, রক্ত ছিটায় বক্ষ ফেড়ে!
 আরবের          কুব্জা বঁধু উট ছেড়ে পথ সব্‌জা-খেতি
  খুঁজিছে          আজকে ঈদে খোর্মা আঙুর খেজুর-মেতি।
   খর্জুর           কন্টকে আজ বন্ধ খুলি যুক্ত বেণির
  ঢালিছে          মুক্ত-কেশী আরবি-নিঝর কলসি পানির!
  জরিদার          নাগরা পায়ে গাগরা কাঁখে ঘাগরা ঘিরা
  বেদুইন          বউরা নাচে মৌ-টুসকির মৌমাছিরা।
   শরমে          নৌজোয়ানীরা নুইয়ে ছিল ডালিম-শাখা,
আজি তার          রস ধরে না, তাম্বুলী ঠোঁট হিঙ্গুল মাখা
করে আজ          খুনসুড়ি ওই শুকনো কাঁটার খেজুর-তরু,
 খেজুরের          গুলতি খেয়ে ‘উঃ’ ডাকে ‘লু’ হাওয়ায় মরু!
 আখরোট          বাদাম যত আরবি-বউ-এর পড়ছে পায়ে,
বলে, ‘এই         নীরস খোসা ছাড়াও কোমল হাতের ঘায়ে!’
 আরবের          উঠতি বয়েস ফুল-কিশোরী ডালিম-ভাঙা
  বিলিয়ে          রং কপোলের আপেল-কানন করছে রাঙা।
  ছুটিতে          দুম্বাসম স্থূল শ্রোণিভার হয় গো বাধা,
   দশনে          পেস্তা কাটি পথ-বঁধুরে দেয় সে আধা!
  অধরের         কামরাঙা-ফল নিঙড়ে মরুর তপ্ত মুখে,
   উড়ুনি         দেয় জড়ায়ে পাগলা হাওয়ার উতল বুকে।
  
না-জানা           আনন্দে গো ‘আরাস্তা’ আজ আরব-ভূমি,
অ-চেনা           বিহগ গাহে ফোটে কুসুম বে-মরশুমি,
আরবের           তীর্থ লাগি ভিড় করে সব বেহেশ্‌ত বুঝি,
  এসেছে          ধরার ধুলায় বিলিয়ে দিতে সুখের পুঁজি।
‘রবিউল          আউওল’ চাঁদ শুক্লা নবমীর তিথিতে
ধেয়ানের           অতিথ্ এল সেই প্রভাতে এই ক্ষিতিতে।
মসীহের            পঞ্চশত সপ্ততি এক বর্ষ পরে
সোমবার           জ্যেষ্ঠ প্রথম – ধরার মানব-ত্রাণের তরে
আসিলেন           বন্ধু খোদার মহান উদার শ্রেষ্ঠ নবি,
‘মারহাবা          সৈয়দ মক্কি মদনি আল-আরবি।’

Deja un comentario

Nombre *
Añadir un nombre para mostrar
Correo electrónico *
Tu correo electrónico no será publicado

Este sitio usa Akismet para reducir el spam. Aprende cómo se procesan los datos de tus comentarios.

es_ESEspañol