০৫. বেদৌরার কথা

Any Subtitlejunio 28, 2023

[ad_1]

গোলেস্তান

(নির্ঝরের অপর পার)

তিনি আমায় ক্ষমা করেছেন একেবারে প্রাণ খুলে হৃদয় হতে! এবার এ-ক্ষমায় এতটুকু দীনতা নেই। এ যে হবেই, তাতো আমি জানতামই, আর তাই যে এমন করে আমার প্রতীক্ষার সকাল-সাঁঝগুলি আনন্দেই কেটে গিয়েছে! আমার এই আশায় বসে-থাকা দিনগুলির, বিরলে-গাঁথা ফুলহারগুলি আর বেদনাবারিসিক্ত বিরহ-গানগুলি তাঁরই পায়ে ঢেলে দিয়েছি। তিনি তা গলায় তুলে তার বিনিময়ে যা দিয়েছেন, সেই তো গো তাঁর আমায়-দেওয়া ব্যথার দান!

তিনি বললেন, – ‘বেদৌরা! কামনা আর প্রেম, এ দুটো হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা আর প্রেম হচ্ছে ধীর, প্রশান্ত ও চিরন্তন। কামনার প্রবৃত্তি বা তার নিবৃত্তিতে হৃদয়ের দাগ-কাটা ভালোবাসাকে যে ঢাকতেই পারে না, এ হচ্ছে ধ্রুব সত্য। এই রকম বিড়ম্বিত যে বেচারারা এই কথাটা একটু তলিয়ে দেখে ধীরভাবে বিশ্বাস করে না, তারা মস্ত ভুল করে, আর তাদের মতো হতভাগ্য অশান্তির জীবনও আর কারুর নেই। – বাদলার দিনে কালো মেঘগুলো সূর্যকে গ্রাস করতে যতই চেষ্টা করুক, তা কিন্তু পারে না। তবে তাকে খানিকক্ষণের জন্যে আড়াল করে থাকে মাত্র। কেননা সূর্য থাকে মেঘের নাগাল পাওয়ার সে অনেক দূরে। কোন্ ফাঁকে আর সে কেমন করে যে অত মেঘের পুরু স্তর ছিঁড়ে রবির কিরণ দুনিয়ার বুকে প্রতিফলিত হয়, তা মেঘও ভেবে পায় না, আর আমরাও জানতে চেষ্টা করিনে। তার পর মেঘ কেটে গেলেই সূর্য হাসতে থাকে আরও উজ্জ্বল হয়ে। কারণ তাতে তো সূর্যের কোনো অনিষ্টই হয় না, – সে জানে, সে যেমন আছে তেমনই অটুট থাকবেই; ক্ষতি যা তোমার আমার – এ দুনিয়ার। তাই বলে কি বাদলের মেঘ আসবে না? সে এসে আকাশ ছাইবে না? সে আসবেই, ও যে স্বভাব; তাকে কেউ রুখতে পারবে না। তবে অত বাদলেও সূর্যকিরণ পেতে হলে মেঘ ছাড়িয়ে উঠতে হয়। সেটা তেমন সোজা নয়, আর তা দরকারও করে না – কামনাটা হচ্ছে ঠিক এই বাদলের মতো; আর প্রেম জ্বলছে হৃদয়ে ওই রবিরই মতো একইভাবে সমান ঔজ্জ্বল্যে!

‘কামনায় হয়তো তোমার বাহিরটা নষ্ট করেছে, কিন্তু ভিতরটা নষ্ট তো করতে পারেনি। তাছাড়া, ও না হলে যে তুমি আমাকে এত বেশি করে চিনতে না, এত বড়ো করে পেতে না। বাইরের বাতাস প্রেমের শিখা নিবাতে পারে না, আরও উজ্জ্বল করে দেয়। আর আমার অন্ধত্ব ও বধিরতা? ওর জন্যে কেঁদো না বেদৌরা, এগুলো থাকলে তো আমি তোমায় আর পেতাম না!’

পুষ্পিত সেব গাছ থেকে অশ্রুচাপা কণ্ঠে ‘পিয়া পিয়া’ করে বুলবুলগুলো উড়ে গেল।

তিনি আবার বললেন, – ‘দেখ বেদৌরা, আজ আমাদের শেষ বাসর-শয্যা হবে। তার পর রবির উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তুমি চলে যাবে নির্ঝরটার ও-পারে, আর আমি থাকব এ-পারে। এই দু-পারের থেকে আমাদের দুজনেরই বিরহ-গীতি দুইজনকে ব্যথিয়ে তুলবে। আর ওই ব্যথার আনন্দেই আমরা দুজনে দুজনকে আরও বড়ো – আরও বড়ো করে পাব!’

সেই দিন থেকে আমি নির্ঝরটার এ-পারে।

আমারও অশ্রু-ভরা দীর্ঘশ্বাস হুহু করে ওঠে, যখন মৌন-বিষাদে-নীরব সন্ধ্যায় তাঁর ভারী চাপা কণ্ঠ ছেপে রাগিণী ও-পার হতে কাঁদতে কাঁদতে এ-পারে এসে বলে, –

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন,
আমার ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন!

Deja un comentario

Nombre *
Añadir un nombre para mostrar
Correo electrónico *
Tu correo electrónico no será publicado

Este sitio usa Akismet para reducir el spam. Aprende cómo se procesan los datos de tus comentarios.

es_ESEspañol