এ মোর অহংকার

Any Subtitlejuillet 1, 2023

[ad_1]

এ মোর অহংকার

নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার,
তোমায় আমি করব সৃজন, এ মোর অহংকার!
    এমনই চোখের দৃষ্টি দিয়া
    তোমায় যারা দেখল প্রিয়া,
তাদের কাছে তুমি তুমিই। আমার স্বপনে
তুমি নিখিল রূপের রানি মানস-আসনে! –
  
সবাই যখন তোমায় ঘিরে করবে কলরব,
আমি দূরে ধেয়ান-লোকে রচব তোমার স্তব।
    রচব সুরধুনী-তীরে
    আমার সুরের উর্বশীরে,
নিখিল কণ্ঠে দুলবে তুমি গানের কন্ঠ-হার –
কবির প্রিয়া অশ্রুমতী গভীর বেদনার!
  
যেদিন আমি থাকব নাকো, থাকবে আমার গান,
বলবে সবাই, “কে সে কবির কাঁদিয়েছিল প্রাণ?”
    আকাশ-ভরা হাজার তারা
    রইবে চেয়ে তন্দ্রাহারা,
সখার সাথে জাগবে রাতে, চাইবে আকাশে,
আমার গানে পড়বে মনে আমায় আভাসে!
  
বুকের তলা করবে ব্যথা, বলবে কাঁদিয়া,
“বন্ধু! সে কে তোমার গানের মানসী প্রিয়া?”
    হাসবে সবাই, গাইবে গীতি,–
    তুমি নয়ন-জলে তিতি
নতুন করে আমার গানে আমার কবিতায়
গহিন নিরালাতে বসে খুঁজবে আপনায়!

রাখতে যেদিন নারবে ধরা তোমায় ধরিয়া,
ওরা সবাই ভুলবে তোমায় দুদিন স্মরিয়া,
    আমার গানের অশ্রুজলে
    আমার বাণীর পদ্মদলে
দুলবে তুমি চিরন্তনী চির-নবীনা!
রইবে শুধু বাণী, সেদিন রইবে নাকো বীণা!
  
তৃষ্ণা-‘ফোরাত’-কূলে কবে ‘সাকিনা’১ -সমা
এক লহমার হলে বধূ, হায় মনোরমা!
    মুহূর্ত সে কালের রেখা
    আমার গানে রইল লেখা
চিরকালের তরে প্রিয়! মোর সে শুভক্ষণ
মরণ-পারে দিল আমায় অনন্ত জীবন।
  
নাই বা পেলাম কণ্ঠে আমার তোমার কণ্ঠহার,
তোমায় আমি করব সৃজন এ মোর অহংকার!
    এই তো আমার চোখের জলে,
    আমার গানে সুরের ছলে,
কাব্যে আমার, আমার ভাষায়, আমার বেদনায়,
নিত্যকালের প্রিয়া আমায় ডাকছ ইশারায়!...

চাই না তোমায় স্বর্গে নিতে, চাই না এ ধুলাতে
তোমার পায়ে স্বর্গ এনে ভুবন ভুলাতে!
    ঊর্ধ্বে তোমার – তুমি দেবী,
    কি হবে মোর সে-রূপ সেবি!
চাই না দেবীর দয়া, যাচি প্রিয়ার আঁখিজল,
একটু দুঃখে অভিমানে নয়ন টলমল!
  
যেমন করে খেলতে তুমি কিশোর বয়সে –
মাটির মেয়ের দিতে বিয়ে মনের হরষে,
    বালু দিয়ে গড়তে গেহ,
    জাগত বুকে মাটির স্নেহ,
ছিল না তো স্বর্গ তখন সূর্য তারা চাঁদ,
তেমনি করে খেলবে আবার পাতবে মায়া-ফাঁদ!
  
মাটির প্রদীপ জ্বালবে তুমি মাটির কুটিরে,
খুশির রঙে করবে সোনা ধূলি-মুঠিরে।
    আধখানা চাঁদ আকাশ পরে
    উঠবে যবে গরব-ভরে
তুমি বাকি আধখানা হাসবে ধরাতে,
তড়িৎ ছিঁড়ে পড়বে তোমার খোঁপায় জড়াতে!

তুমি আমার বকুল যূথী – মাটির তারা-ফুল
ঈদের প্রথম চাঁদ গো তোমার কানের পারসি দুল!
    কুসমি-রাঙা শাড়িখানি
    চৈতি সাঁঝে পড়বে রানি,
আকাশ-গাঙে জাগবে জোয়ার রঙের রাঙা বান,
তোরণ-দ্বারে বাজবে করুণ বারোয়াঁ মুলতান।
  
আমার-রচা গানে তোমায় সেই বেলাশেষে
এমনই সুরে চাইবে কেহ পরদেশি এসে!
    রঙিন সাঁঝে ওই আঙিনায়
    চাইবে যারা, তাদের চাওয়ায়
আমার চাওয়া রইবে গোপন! – এ মোর অভিমান,
যাচবে যারা তোমায়, রচি তাদের তরে গান!
  
নাই বা দিল ধরা আমায় ধরার আঙিনায়,
তোমায় জিনে গেলাম সুরের স্বয়ংবর-সভায়!
    তোমার রূপে আমার ভুবন
    আলোয় আলোয় হল মগন,
কাজ কি জেনে কাহার আশায় গাঁথছ ফুল-হার
আমি তোমায় গাঁথছি মালা এ মোর অহংকার!

কৃষ্ণনগর
২৬ চৈত্র, ১৩৩৪

laissez un commentaire

prénom *
Ajouter un nom d'affichage
Email *
Votre adresse email ne sera pas publiée

Ce site utilise Akismet pour réduire les indésirables. En savoir plus sur comment les données de vos commentaires sont utilisées.

fr_FRFrançais