মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?

Any Subtitlejuin 29, 2023

[ad_1]

মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?

আমরা ইহারই মধ্যে ভুলিয়া যাই নাই হতভাগ্য হাবিবুল্লার হত্যা-বীভৎসতা। আজও মনে পড়ে সেই দিন, যেদিন খবর আসিয়াছিল যে, সামরিক পুলিশের সঙ্গে একদল মুহাজিরিন গোলমাল করায় কাঁচাগাড়ি নামক স্থানে মুহাজিরিনদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। একজন ভারতীয় সৈন্য তিন তিনবার গুলিবর্ষণ করে, তাহাতে মাত্র একজন নিহত ও একজন আহত হয়! কোনো মূর্খ বিশ্বাস করিবে এ কথা?

আমরা বলি, একটি আঘাতের বদলেই তিনি তিনবার গুলিবর্ষণ করে, এ কোন্ সভ্য দেশের রীতি? তোমাদের তো সিপাহি-সৈন্যের অভাব নাই – বিশেষ করিয়া সেই সীমান্ত দেশে। চল্লিশটি নিরস্ত্র লোককে, তাহারা যদি সত্যই অন্যায় করিয়া থাকে, সহজেই তো গেরেফতার করিয়া লইতে পারিতে। তাহা না করিয়া তোমরা চালাইয়াছিলে গুলি! আর কাহাদের উপর? যাহারা স্বদেশের, স্বজনের মায়া-মমতা ত্যাগ করিয়া চিরদিনের জন্য তোমাদের হাত হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিতে চলিয়াছিল।

কিন্তু আর আমরা দাঁড়াইয়া মার খাইব না, আঘাত খাইয়া খাইয়া, অপমানে বেদনায় আমাদের রক্ত এইবার গরম হইয়া উঠিয়াছে। কেন, তোমাদের আত্মসম্মানজ্ঞান আছে, আর আমাদের নাই? আমরা কী মানুষ নই? তোমাদের একজনকে মারিলে আমাদের এক হাজার লোককে খুন কর, আর আমাদের হাজার লোককে পাঁঠাকাটা করিয়া কাটিলেও তোমাদের কিছু বলিতে পাইব না? মনুষ্যত্বের, বিবেকের, আত্মসম্মানের, স্বাধীনতার উপর এত জুলুম কেহ কখনও সহ্য করিতে পারে কি? এই যে সেদিন হতভাগারা হাজার বছরের পরিচিত, সারা জীবনের সুখ-দুঃখ-স্মৃতি-বিজড়িত, বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি, আত্মীয়-পরিজন, জননী-জন্মভূমির মায়া-মমতা ত্যাগ করিয়া, বড়ো দুঃখে বড়ো কষ্টে জীবনের সঙ্গে জড়ানো এইসব স্নেহ-স্মৃতির বন্ধন জোর করিয়া ছিঁড়িয়া এক মুক্ত স্বাধীন অজানার দিকে পাড়ি দিতেছিল, ইহাদের বেদনা বুঝিবার অন্তর তোমাদের আছে কি? মনুষ্যত্বের এই যে মস্তবড়ো একটা দিক, পরের বেদনাকে আপন করিয়া নেওয়া – ইহা কি আর তোমাদের আছে? স্বাধীনতাকে, মনুষ্যত্বকে এমন নির্মমভাবে দুই পায়ে মাড়াইয়া চলিবে আর কতদিন? এই অত্যাচারের, এই মিথ্যার বুনিয়াদে খাড়া করা তোমাদের ঘর – মনে কর কি, চিরদিন খাড়া থাকিবে? এই সব অপকর্মের, এই সব অমার্জনীয় পাপের, এই সব নির্মম উৎপীড়নের জন্য বিবেকের যে দংশন তাহা হইতে তোমাদের রক্ষা করিবে কে? এ-মহাশক্তির ভীষণতা আজও কি তোমার চক্ষে পড়ে নাই? তোমাদের অত্যাচারে, জুলুমে নিপীড়িত হইয়া, মানবাত্মা – মনুষ্যত্বের এত পাশবিক অবমাননা সহ্য করিতে না পারিয়া মানুষের মতো যাহারা স্পষ্ট করিয়া বলিয়া দিতে পারিল যে, এখানে আর ধর্ম কর্ম চলিবে না, এবং চিরদিনের মতো তোমাদের সংশ্রব ছাড়িয়া তোমাকে সালাম করিয়া বিদায় লইল, – সেই বিদায়ের দিনেও তাহাদের উপর সামান্য পশুর মতো ব্যবহার করিতে তোমাদের লজ্জা হইল না, দ্বিধা হইল না! সামান্য খুঁটিনাটি ধরিয়া, ছল করিয়া গায়ে পড়িয়া তাহাদের সাথে গোলমাল বাধাইলে, হত্যা করিলে! আবার হত্যা করিলে আমাদেরই ভারতীয় সৈন্য দ্বারা! যাহাকে হত্যা করিলে, তাহাকে হত্যা করিয়াও ছাড় নাই, তাহার লাশ তিন দিন ধরিয়া আটকাইয়া রাখিয়া পচাইয়া গলাইয়া ছাড়িয়াছ! মৃতের প্রতিও এত আক্রোশ, এত অসম্মান কেবল তোমাদের সভ্য জাতিই একা দেখাইতে পারিতেছে! তোমাদেরই কিচনার – লর্ড কিচনার মেহেদির কবর হইতে অস্থি উত্তোলন করিয়া ঘোড়ার পায়ে বাঁধিয়া ঘোড়দৌড় করিয়াছে, তোমাদের এই সৈন্যদল যে তাহারই শিষ্য। না জানি আরও কত বাছাদের, আমাদর কতো মা-বোনদের খুলি উড়াইয়াছ, তোমরাই জান। আমাদের যে ভাই আজ তোমাদের হাতে শহিদ হইল, সে এমন এক মুক্ত স্বাধীন দেশে গিয়া পৌঁছিয়াছে যেখানে তোমাদের গুলি পৌঁছিতে পারে না! সে যে মুক্তির সন্ধানেই বাহির হইয়াছিল! মনে রাখিয়ো, সে খোদার আরশের পায়া ধরিয়া ইহার দাদ (বিচার) মাগিতেছে! দাও, উত্তর দাও! বলো তোমার কী বলিবার আছে!

laissez un commentaire

prénom *
Ajouter un nom d'affichage
Email *
Votre adresse email ne sera pas publiée

Ce site utilise Akismet pour réduire les indésirables. En savoir plus sur comment les données de vos commentaires sont utilisées.

fr_FRFrançais