আমার পথ

Any SubtitleJune 29, 2023

[ad_1]

আমার পথ

আমার এই যাত্রা হল শুরু
ওগো কর্ণধার,
তোমারে করি নমস্কার।

‘মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে’ ‘জয় প্রলয়ংকর’ বলে ‘ধূমকেতু’কে রথ করে আমার আজ নতুন পথে যাত্রা শুরু হল। আমার কর্ণধার আমি। আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য। আমি প্রথমে আমার যাত্রা-শুরুর আগে আমার সত্যকে সালাম জানাচ্ছি – নমস্কার করছি। যে-পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে-পথ ছাড়া আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়! রাজভয় – লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যাবে না। আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি, যদি আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই আমার কিছু করতে পারবে না। যার ভিতরে ভয়, সেই তার ভয় পায়। আমার বিশ্বাস, যে নিজেকে চেনে, তার আর কাউকে চিনতে বাকি থাকে না। অতএব যে মিথ্যাকে চেনে, সে মিছামিছি তাকে ভয়ও করে না। যার মনে মিথ্যা, সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি এত বড়ো একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারুক্‌খে কুর্নিশ করে না – অর্থাৎ কেউ তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারে না। এই যে নিজেকে চেনা, আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথ-প্রদর্শক কান্ডারি বলে জানা, এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়। এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি। আর যদিই এটাকে কেউ ভুল করে অহংকার বলে মনে করেন, তবু এটা মন্দের ভালো – অর্থাৎ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো – লাখো গুণে ভালো। অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়। ওতে মানুষকে ক্রমেই ছোটো করে ফেলে, মাথা নীচু করে আনে। ওরকম মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক – অনেক ভালো।

অতএব এই অভিশাপ-রথের সারথির স্পষ্ট কথা বলাটাকে কেউ যেন অহংকার বা স্পর্ধা বলে ভুল না করেন।

স্পষ্ট কথা বলায় একটা অবিনয় নিশ্চয় থাকে ; কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়াটা দুর্বলতা। নিজেকে চিনলে, নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির উপর অটুট বিশ্বাস আসে। এই স্বাবলম্বন, এই নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শিখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধিজি। কিন্তু আমরা তাঁর কথা বুঝলাম না, ‘আমি আছি’ এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম, ‘গান্ধিজি আছেন।’ এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে। একেই বলে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব। অন্তরে যাদের এত গোলামির ভাব, তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পাবে কী করে? আত্মকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেই দিনই আমরা স্বাধীন হব, তার আগে কিছুতেই নয়। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত, তাহলে এই তেত্রিশ কোটি দেবতার দেশ এতদিন পরাধীন থাকত না। আত্মকে চেনা, নিজের সত্যকে নিজের ভগবান মনে করার দম্ভ – আর যাই হোক, ভণ্ডামি নয়। এ-দম্ভতে শির উঁচু করে, পুরুষ করে, মনে একটা ‘ডোন্ট কেয়ার’-ভাব আনে। আর যাদের এই তথাকথিত দম্ভ আছে, শুধু তারাই অসাধ্য সাধন করতে পারবে।

থাক ‘ধূমকেতু’-রথ সম্বন্ধে একটু বলা যাক এখন। শুনেছি নাকি ঝগড়ার আদি নারদ মুনি ঢেঁকিতে চড়ে স্বর্গ হতে আসতেন। অর্থাৎ তাঁর ওই ঢেঁকি অমঙ্গলসূচক ছিল, ও ঢেঁকি দেখা গেলেই মর্ত্যলোকে মনে করত এইবার একটা বিষমঝগড়া-ফ্যাসাদ মারামারি কাটাকাটি লেগে যাবে। আর নাকি হতও তাই। আমির মনে করি কি, এই ধূমকেতুই ছিল তাঁর ঢেঁকি বা অগ্নিরথ। কেন না, ধূমকেতুর উদয় হলেই ওই রকম ঝগড়া-ফ্যাসাদ মারামারি কাটাকাটি কুড়ুম তালে লেগে যায়। বিপ্লব-বিদ্রোহ আর মহাপ্রলয় আনে। আমি হামজার পুথিতেও আছে যে উম্মর উম্মিরা এইরকম কোনো একটা ঢেঁকি কুলো নিয়ে গগন-মার্গে চলাফেরা করতেন। তার দুটো লাইন এখনও মনে পড়ে –

কাগজের ঢাল মিয়াঁর তালপাতার খাঁড়া।
আর লড়ির গলায় দড়ি দিয়ে বলে চল হামারা ঘোড়া।

‘সারথি’মানে এই অগ্নি-এরোপ্লেন ধূমকেতুর পাইলট বা চালানেওয়ালা।

এ-ধূমকেতু’ ঝগড়া-বিবাদ আনবে না, তবে প্রলয় যদিই আনে, তাহলে সেটার জন্যে দায়ী ধূমকেতুর দেবতা, – সারথি নয়। এ-দেশের নাড়িতে-নাড়িতে অস্থিমজ্জায় যে পচন ধরেছে, তাতে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না। যার ভিত্তি পচে গেছে তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাড়া করা যাবে, ততবারই তা পড়ে যাবে। প্রলয় আনার যে দুর্দম অসম-সাহসিকতা, ‘ধূমকেতু’ যদি তা না আনতে পারে, তবে তাতে অমঙ্গলের চেয়ে মঙ্গলই আনবে বেশি।

দেশের যারা শত্রু, দেশের যা-কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে ‘ধূমকেতু’হবে আগুনের সম্মার্জনী! ‘ধূমকেতু’র এমন গুরু বা এমন বিধাতা কেউ নেই, যার খাতিরে সে সত্যকে অস্বীকার করে কারুর মিথ্যা বা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় দেবে। ‘ধূমকেতু’ সে-দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। ‘ধূমকেতু’ কোনোদিনই কারুর বাণীকে বেদবাক্যি বলে মেনে নেবে না, যদি তার সত্যতা প্রাণে তার সাড়া না দেয়। না বুঝে বোঝার ভণ্ডামি করে পাঁচ জনের শ্রদ্ধা আর প্রশংসা পাবার লোভ ‘ধূমকেতু’ কোনোদিনই করবে না।

ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়। কোনো ভুল করছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা স্বীকার করে নেব! কিন্তু না বুঝেও নয়, ভয়েও নয়। ভুল করছি বা করেছি বুঝেও শুধু জেদের খাতিরে বা গোঁ বজায় রাখবার জন্যে ভুলটাকেই ধরে থাকব না। তাহলে ‘ধূমকেতু’র আগুন সেই দিনই নিবে যাবে। একমাত্র মিথ্যার জলই ‘ধূমকেতু’-শিখাকে নিবাতে পারবে। তাছাড়া ধূমকেতুকে কেউ নিবাতে পারবে না।

‘ধূমকেতু’ কোনো সাম্প্রদায়িক কাগজ নয়। মানুষ-ধর্মই সবচেযে বড়ো ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোন্খানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, আদত সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য, কোনো হিংসার দুশমনির ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনও অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।

…দেশের পক্ষে যা মঙ্গলকর বা সত্য, শুধু তাই লক্ষ্য করে আমরা এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হলাম।

জয় প্রলয়ংকর!

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish