কুহেলিকা – ২০ (শেষ)

Any SubtitleJune 28, 2023

[ad_1]

কুহেলিকা – ২০ (শেষ)

বজ্রপাণি, প্রমত্ত প্রভৃতির সাথে জাহাঙ্গীরেরও দ্বীপান্তর হইল। তাহার সত্যকার নাম প্রকাশ পাইল না। জাহাঙ্গীর তাহার নাম বলিয়াছিল স্বদেশকুমার। সেই নামেই তাহার শাস্তি হইয়া গেল।

ফিরদৌস বেগম ও দেওয়ান সাহেব লক্ষাধিক টাকা খরচ করিয়াও তাহাকে বাঁচাইতে পারিলেন না।

যেদিন জাহাঙ্গীরের বিচার হইয়া গেল সেইদিন সন্ধ্যায় মাতা তাহার সহিত আলিপুর জেলে গিয়া দেখা করিলেন। মাতা আর সেখানে কাঁদিলেন না। শুধু বলিলেন ‘খোকা, তুই তো চললি, তোর এই ঐশ্বর্য কাকে দিয়ে যাব?’

জাহাঙ্গীর বলিল, ‘তুমিও কি চলে যাবে মা?’

মাতা শান্তস্বরে বলিলেন, ‘তুই তো আমায় থাকতে দিলিনে। আমি মক্কা গিয়ে একবার কাবা ঘরের ধুলায় লুটিয়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করব খোদাকে – কেন তিনি এত বড়ো শাস্তি দিলেন?’

জাহাঙ্গীর বলিল, ‘আর তো তোমাকে নিষেধ করবার অধিকার আমার নাই মা। তুমি যেখানে গিয়ে শান্তি পাও, যাও। যদি ফিরে আসি, আর তুমি বেঁচে থাক, দেখা হবে!’… বলিয়াই একটু ভাবিয়া বলিল, ‘চম্পা এসেছিল তোমার কাছে?’

মাতা বলিলেন, ‘এসেছিল, কিন্তু আমি তাকে তাড়িয়ে দেয়েছি!’

জাহাঙ্গীর বলিল, ‘ভুল করেছ মা, ও ঐশ্বর্যের মালিক যদি আমিই হই, তাহলে ওই ঐশ্বর্যের ভার তারই হাতে ছেড়ে দিয়ো! আমার মার মতো শত শত মা আজ নিরন্ন, তাঁদের মুখে তাঁদের সন্তানের মুখে সে অন্ন দেবে। ও ঐশ্বর্য এখন আমার দেশের নির্যাতিত ভাই-বোনদের। এবার সে এলে তাকে ফিরিয়ো না। হাঁ, ভূণীকে আমার সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ ছেড়ে দিয়ো। ও অনেক দুঃখ পেয়েছে।’

মা কিছুক্ষণ ভাবিয়া শান্তস্বরে বলিলেন, ‘আচ্ছা তাই হবে।’ তিনি অধর দংশন করিয়া কান্নার বেগ সামলাইতে লাগিলেন।

মাতার সহিত সকলেই আসিয়াছিল। জাহাঙ্গীর হাসিয়া হারুণের দিকে চাহিয়া বলিল, “তোমার কথাই সত্য হল কবি, নারী ‘কুহেলিকা’।” হারুণ কাঁদিয়া ফেলল।

ভূণী মূর্ছিতা হইয়া পড়িয়া গেল। তাহার মুখ দিয়া কেবল একটা শব্দ নির্গত হইল, ‘নিষ্ঠুর’।

জেলের ভিতর পাগলা ঘন্টি বাজিয়া উঠিল। জেল ভাঙিয়া কয়েকজন রাজবন্দি পলাইয়াছে।

স-ওয়ার্ডার জেলার আসিয়া জাহাঙ্গীরকে লইয়া চলিয়া গেল।

মাতা সেইখানে পড়িয়া কাঁদিয়া উঠিলেন, ‘খোকা! আমার খোকা!’

 

॥ সমাপ্ত ॥

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish