স্বাগত

Any SubtitleJune 29, 2023

[ad_1]

স্বাগত

‘খোশ-আমদেদ!’ স্বাগত হে দেশবন্ধু! হে বীরেন্দ্র! তোমাদের এই তিমির রাত্রির অবসানে আমরা আমাদের স্বাগত সম্ভাষণ জানাচ্ছি। তোমরা ফিরে এসো এই বাংলার শ্মশানে।

জ্বালিয়ে রেখেছি এই শ্মশান-চিতার হোম-শিখা ; এসো ঋষি, হোতা হও। এসো তবে, কপালে শ্মশান-ভস্মের পাংশু টিকা পরিয়ে দিই। দেখেছ, কী ভীষণ ধূমকূণ্ডলী উঠেছে বাংলার আকাশ বাতাস ছেয়ে। বলো ঋষি, “বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান!” এসো ঋত্বিক, উচ্চারণ করো শব-সাধনার মন্ত্র। এই শবের মাঝে শিব জাগাতে হবে। পারবে? – তবে এসো। এই নাও মড়া, এই ধরো নর-কঙ্কাল – স্তূপে স্তূপে সাজানো। আর কী চাও ঋষি? ওই দেখো শৃগাল, ওই দেখো কুক্কুর – ওই দেখো শকুন – মড়ার পচা মাংস নিয়ে টানাটানি খাওয়া-খাওয়ি করছিল। জ্যান্ত মানুষের সাড়া পেয়ে পালিয়ে গেল। ওই দেখো. শ্মশানে নাচছে ভূত-প্রেত-ডাকিনী-যোগিনী, – এই ভূতে-ভরা শ্মশানে এসে তোমাদেরও যেন ভূতে না পায় – সাবধান ঋষি! তোমরা ছিলে অন্ধকারের শান্তিতে, স্নিগ্ধ কালো অন্ধকার তোমাদের মায়ের মতো কোলে করে রেখেছিল। এখন এলে শ্মশানের বিকট অট্টহাসি, করুণ আর্তনাদ আর প্রলয়-নৃত্যের ভীম কোলাহলের মাঝে।

ভয় পাচ্ছ কি ঋষি? সাবধান! এ কাল-শ্মশানে এসে সবাই ভয় পায়, ভূত-যোনিগ্রস্ত হয়। তাই আবার বলি, সাবধান! এখানে বড়ো ক্রন্দন, বড়ো জ্বালা। সইতে পারবে? এখানে মায়ের কোল নেই, পিতার মঙ্গলহস্ত নেই ভগিনীর স্নেহ নেই, এখানে কল্যাণীর মঙ্গলদীপ জ্বলে না। কেউ পথ দেখাতে নেই। অভাব, বেদনা, আঘাত, মার, বিদ্রুপের চাবুক-জ্বালা, অনাদর, অপমান, এই সপ্ত নরক হাঁ করে আছে গ্রাস করবার জন্যে। এই জাহান্নমের মধ্যে বসে পুষ্পের হাসি হাসতে পারবে? – তবে এসো ঋষি, এসো! বন্ধনভয়-রাজভয়-বিজেতা বীর তোমরা, এই শ্মশানে শবের মাঝে এসে বসো। শিব আর অন্নপূর্ণাকে এই মড়ার মুল্লুকে যদি কোনোদিন আনতে পার, তবে সেইদিন তোমাদের নমস্কার করব। আজ তোমাদের জন্যে আমাদের নমস্কার নেই।

এই শ্মশানে আছে শুধু পিশাচের খলখল অট্টহাস, আর অসহায়ের করুণ নাড়িছেঁড়া মর্মভেদী ক্রন্দন! তা নিতে চাও? – তবে নাও। কিন্তু তা সইবে না ঋষি। আবার বলি, আজ তোমাদের জন্যে গৃহের মঙ্গল-শঙ্খ নয়, –তোমাদের জন্যে স্রকচন্দন নয়, তোমাদের জন্যে আলোর দেয়ালি উৎসব নয়, কল্যাণহস্তের মঙ্গল দীপশিখা তোমাদের জন্য নয়, – তোমাদের জন্যে এই শ্মশানের ধূম আর ভস্ম অট্টহাস্য আর ক্রন্দন রক্ত আর অশ্রু – মৃত্যু আর ভীতি! এরই মাঝে হে চিত্তরঞ্জন, হে বীরেন্দ্র! তোমাদের জন্য ধূলার আসন পাতা। তোমরা এসো। স্বাগত!*

——–
* দেশবন্ধু ও বীরেন্দ্র শাসমলের কারামুক্তি উপলক্ষে

Leave a comment

Name *
Add a display name
Email *
Your email address will not be published

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish